চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা-চুলে নিমপাতা মাখলে কি হয়?
চুলের জন্য নিম পাতা অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। নিম পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এনটিঅক্সিডেন্ট। তাই চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা এবং চুলের নিম পাতা মাখলে কি হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকে।
আমাদের কাছে ত্বক যেমন স্বপ্নের বস্তু তেমনি চুল ও কিন্তু আমাদের সকলের প্রিয়
বস্তু। চুলের মাধ্যমে মানুষের সৌন্দর্য ফুটে। নিমপাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগালে
এ চুলকানি কমে। নিয়মিত নিমপাতার সঙ্গে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের
উজ্জলতা বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়। চুল: উজ্জ্বল, সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন চুল
পেতে নিমপাতার ব্যবহার বেশ কার্যকর।
চুলের খুশকি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত
নিম অয়েল:
ড্যানড্রাফ বা খুশকি দূর করতে নিমপাতা দিয়ে একটি তেল তৈরি করে নিতে হবে। তার
জন্য আমাদের প্রথমে প্রয়োজন হবে কিছু নিমপাতা এবং নারিকেলের তেল। একটি পাত্রে
নিমপাতা কে নারকেল তেলের মধ্যে গরম করে নিতে হবে। এবার তেলকে ঠান্ডা করে খুব ভালো
করে ছেঁকে নিন।
আরো পড়ুনঃ
কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার উপায়
তারপর তেলটিকে সম্পূর্ণর চলে ভালো করে ম্যাসাজ করে এক ঘন্টা পর ভালো কোন শ্যাম্পু
দিয়ে চুলটাকে ওয়াশ করে বা ফেলুন। নিমের তেলে প্রচুর পরিমাণে- ক্যালসিয়াম,
ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন -ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, টাই-গ্লিসারাইড ইত্যাদি থাকে যা
চুলকে মোস্ট রাইস এবং নারিশ ও সফট করতে সাহায্য করে।
নিম ও দই এর মিশ্রণ:
নিম ও দই এর পেস্ট তৈরি করতে নিমপাতা কে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর
একটি পাত্রে নিম পাতার সাথে দুই মিশিয়ে দুটোকে ভালোভাবে মিশ্রণ করে চুলের গোড়া
থেকে ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে মেখে নিতে হবে।
তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর চুলকে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটি
আমাদের চুলের খুশকি বা ড্যানড্রাফ দূর করতে খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। দইএর
মধ্যে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
নিমের পানি:
পানির মধ্যে কিছু নিমের বাধা ছেড়ে দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট
পর্যন্ত ফুটাতে থাকুন। তারপর বয়েল করা গরম পানি ভালোভাবে ঠান্ডা করে নিন। চাইলে
আপনি নিমের পানি শ্যাম্পু করার আগে অথবা পরে চুল ধোয়ার জন্য ব্যবহার করতে
পারেন।
এছাড়াও এই পানি ১০ মিনিট চুলে মেসেজ করার পরে ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন তাই সপ্তাহে দুইবার এই নিয়ম মেনে কাজ করুন তাহলে সহজে আপনার দূর হয়ে
যাবে।
নিম পাতা বাটা চুলে দিলে কি হয়?
নিমের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপকরণ খুশকি দূর করে এবং ইচিং বা চুলকানির
সমস্যা কমায়। নতুন চুলের বৃদ্ধি- চুলের বৃদ্ধি বা গ্রোথের পাশাপাশি নতুন করে চুল
গজাতেও সাহায্য করে নিম। নিমের মধ্যে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলি হেয়ার ফলিকল এবং চুলের
গোড়া শক্ত করে।
আরো পড়ুনঃ
দাম্পত্য জীবনের সুখী হওয়ার উপায়
এছাড়াও নিম পাতার বাটাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক
এক ধরনের তেজ। যা আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং নার্ভ থেকে এবং গোড়ালি থেকে
চুলকে বের করতে সাহায্য করে। তাই বলা যায় নিমপাতার বাটা চুলের জন্য খুবই উপকারী
একটি উপাদান। এটি অনুশীলন করার মাধ্যমে আমরা ভালো একটা ফলাফল অর্জন করতে পারব।
নতুন চুল গজাতে নিম পাতার ব্যবহার
নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এই পাতা। এক মুঠো নিমপাতা নিয়ে এক লিটার পানিতে
ফুটিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি ঠান্ডা করে বোতলে সংরক্ষণ করুন। শ্যাম্পু করার পর
সপ্তাহে একদিন নিমের এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। নিম তেলে প্রচুর পরিমাণে
ভিটামিন 'ই' এবং ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখে।
ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণের হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষিত করতে নিমপাতা খুবই
কার্যকরী! ব্রণ দূর করতে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন।ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে
নিয়মিত নিমপাতার সঙ্গে কাঁচাহলুদ ব্যবহার করতে পারেন। তবে হলুদ ব্যবহার করার পর
কয়েক ঘণ্টা রোদে যাবেন না। তাই বলা যায়, নতুন চুল গজাতে নিম পাতা খুবই কার্যকরী
একটি উপাদান।
চুল পড়া কমাতে নিম পাতার ব্যবহার
চুল পড়া কমাতে নিম পাতার ব্যবহার ব্যাপক। প্রথমে সমপরিমাণ নিমপাতা, অ্যালোভেরা
,আমলকী ও মধু দিয়ে প্যাক বানাতে হবে। চাইলে এক চা চামচ কর্পূরের গুঁড়াও মিশিয়ে
নিতে পারেন। এই প্যাক মাথায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন।
সপ্তাহে ৪ দিন ব্যবহারে আপনার মাথায় নতুন চুল গজাবে। চুল পড়া সমস্যা অনেকটাই কমে
যাবে। এটি বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সকলের খুব ভালো ভালো ফল
পাচ্ছে। তাই বলা যায়, চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা ব্যাপক।
নিম প্রাকৃতিক কন্ডিশনার
চুলের রুক্ষ শুষ্ক ভাব দূর করে তা মোলায়েম রাখতে সাহায্য করে নিম। বিশেষ করে
চুলের ডগার অংশে ভাল কন্ডিশনারের কাজ করে নিম। এর ফলে চুল নরম এবং উজ্জ্বল হয়।
অর্থাৎ প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে নিম।নিমপাতা ও মধুর মিশ্রন চুলে
কন্ডিশনারের কাজ করে।
তারপর ১ টেবিল চামচ নিমপাতা গুঁড়াএকসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। চুলের গোড়া
থেকে ডগা পর্যন্ত ভালো করে মিশ্রনটি লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট রেখে দিন। এরপর ঠাণ্ডা
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহারে চুল হবে সুন্দর ও ঝকঝকে। সঙ্গে
চুলের গোড়াও হবে মজবুত।
নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম
- পানি ফুটিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
- পানিতে সারারাত নিমের পাতা ভিজিয়ে রাখুন।
- এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। পাতাগুলোকে ব্লেন্ড করে এর সাথে মধু মিশিয়ে এই পেস্ট ৩০ মিনিট চুলে দিয়ে রাখুন।
- সপ্তাহে অন্তত একবার এটি করবেন। নিয়মিত এই প্যাক ব্যবহারে আপনি খুশকি দূর করতে পারবেন এবং চুলও নরম হবে।
- মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ৩ ঘণ্টা । এতে নিমের পাতা মিশিয়ে একটু পানি দিয়ে ব্লেন্ড করুন।
- এই পেস্ট এর মধ্যে টক দই মিশান আর লেবুর রসও।
- চুলে তেল দিয়ে তাতে এই পেস্ট লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর চুল শ্যাম্পু করুন।
- সপ্তাহে ২ বার এই পেস্ট ব্যবহার করুন ভালো ফল পাওয়ার জন্য।
লেখকের মন্তব্য : শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক, চুলের জন্য নিমপাতা খুবই উপকারী। আপনারা উপরোক্ত আলোচনাটি পড়ার
মাধ্যমে এতক্ষণে নিশ্চয়ই ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা
ও চুলের খুশকি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। নিমপাতা
আমাদের তুলার জন্য সত্যি আশীর্বাদ স্বরূপ। এর প্রাকৃতিক গুনাগুন গুলো বলে শেষ করা
যাবে না।
তাই বলা যায়, আজকের এই আর্টিকেলটি যদি পড়ে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধু
বান্ধবের মাঝে শেয়ার করে তাদের জন্য সুযোগ করে দিন। এরকম সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য
পেতে প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url